আজ ২৪ জুন। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির জন্মদিন। বয়সের খাতায় বাড়লো আরও একটি বছর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা। বিশ্বকাপ জয়ের পরে এটিই তার প্রথম জন্মদিন। গত ১ বছরে বদলে গেল অনেককিছু।

নিজের ৩৬ বছরের জন্মদিনটা হয়তো সব থেকে আনন্দ করে পালন করবেন মেসি। পরিবারের সঙ্গেই হয়তো থাকবেন। কিন্তু মনের মধ্যে শান্তিটা অন্য সব বারের থেকে বেশি থাকবে। কারণ, এই একটা বছরে যে নিজের সব থেকে প্রিয় উপহার ফুটবল বিশ্বকাপ পেয়ে গেছেন মেসি।

এক বছর আগে মেসি যখন নিজের ৩৫তম জন্মদিন পালন করছিলেন তখন তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেটে দেশের হয়ে দুটো ট্রফি জেতা হয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালে পেয়েছেন কোপা আমেরিকা। ২৮ বছরে পরে আবার লাতিন আমেরিকার সেরা দল হয়েছে আর্জেন্টিনা। পরের বছর জন্মদিনের মাসেই জিতেছেন ফাইনালিসিমা। ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন ইটালিকে হেলায় হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু তখনও বোধ হয় বুকের বাঁ দিকটায় হালকা খচখচানি থাকতোই। কারণ, অধরা ছিল বিশ্বকাপ। বার বার সাক্ষাৎকারে যিনি বলেছেন, সাতটি ব্যালন ডি আর-এর থেকে একটি বিশ্বকাপ তাঁর কাছে বেশি দামি, তাঁর তো খারাপ লাগারই কথা। কারণ, ওই ট্রফিটা না পেলে যে আর্জেন্টিনাবাসীর কাছে মারাদোনার পরে দ্বিতীয় স্থানেই থেকে যেতে হত তাঁকে। শ্রেষ্ঠ হওয়া হত না।

তাই একটাই লক্ষ্য ছিল মেসির। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপটা জিততেই হবে। যে করেই হোক। কাতারের বিশ্বকাপ জেতার প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। অন্য দলের মতো হোটেলে না থেকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সঙ্গে করে খাবার ও রাঁধুনি নিয়ে গিয়েছিলেন মেসিরা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকারা থাকলেও বিশ্বকাপের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন সেই মেসি। তিনি কী করছেন, কী বলছেন সে দিকেই নজর ছিল সংবাদমাধ্যমের। মেসিদের অনুশীলনে থাকত সব থেকে বেশি ভিড়।

বিশ্বকাপের শুরুটাই যে এ ভাবে হবে তা ভাবতে পারেননি মেসি। প্রথম ম্যাচে ফিফা ক্রমতালিকায় ৫০-এর বাইরে থাকা সৌদি আরবের কাছে হার। আবার প্রশ্ন শুরু হয়েছিল, এ বারও কি ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হবে মেসিকে? হতাশ ছিলেন লিয়ো। তিনি নিজে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে যেন মারা গিয়েছি।’’ কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। দলকে এক জায়গায় জড়ো করেছিলেন। নেতার মতো সবার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ‘‘পরের দুটো ম্যাচ জিততেই হবে।’’ লিয়োর কথা মেনে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছিলেন দলের বাকি সব ফুটবলার। কাতার বিশ্বকাপেই যেন প্রকৃত অর্থে নেতা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন মেসি। যেখানে তিনিই শেষ কথা। গোটা দলটা খেলছে তাঁকে জেতাতে। আর যখন একটা দলের ফুটবলাররা এতটা তাগিদ দেখান তখন তাঁদের খেলাটাই বদলে যায়। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। বিশ্বকাপ জিতে তবে থেমেছিলেন মেসিরা।

বিশ্বকাপ জেতার আগেই অবশ্য আর্জেন্টিনার সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন লিয়ো। তাঁর টানেই প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে হাজার হাজার সমর্থক পাড়ি দিয়েছিলেন কাতার। খোলা আকাশের নিচে শুয়েছেন, কিন্তু প্রতিটি ম্যাচে আকাশি-সাদা জার্সিধারিদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন। বৃদ্ধ থেকে শিশু, সবাই ছিল সেই তালিকায়। প্রথম ম্যাচে হারের পরেও তাই তাঁরা মেসির উপর থেকে বিশ্বাস হারাননি। এমনকি, ফাইনালে ওঠার পরে আর্জেন্টিনার এক মহিলা সাংবাদিক মেসির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বলেই ফেলেন, ‘‘তুমি বিশ্বকাপ জেত বা না জেত, তাতে তোমার উপর থেকে আমাদের বিশ্বাস এক চিলতেও কমবে না। তুমি দেশের কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছ। তাদের আনন্দ দিয়েছ। লিয়ো, তোমাকে একটা কথাই বলতে চাই। ধন্যবাদ।’’

কাতারে নামার আগেই মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বারই শেষ। আর বিশ্বকাপ খেলবেন না। বিশ্বকাপ জেতার পরে অবশ্য অবসর নেননি তিনি। জানিয়েছেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে আরও কিছু দিন খেলতে চান। মেসি-ভক্তরা চান, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপেও তিনি খেলুন। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে মেসি জানিয়েছেন, আর বিশ্বকাপে নামবেন না তিনি। কত দিন আর খেলবেন মেসি? উত্তর অজানা। পরিবারের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ করতে করতেই হয়তো সেই সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলবেন লিয়ো।